অম্বুবাচী মাতা কামাখ্যা সম্পর্কে অজানা কিছু কথা

রহস্যময়  মাতা  কামরুপ কামাখ্যার কথা অনেকে হয়তো জানেন না,তাদের জন্য আমার এই লিখা🖋️🖋️


[আগেই বলে রাখছি, যদি সত্যিই ধর্মকে বিশ্বাস করেন, তাহলে ছবি নিয়ে কোন বির্তকে জুড়বেন না, যদি না জেনে থাকেন, তাহলে জেনে নেবেন। যদি জানতে না চান, এড়িয়ে যাবেন  ]




অম্বুবাচীতে মা কামাখ্যার পূজা করা হয়। কামাখ্যা মন্দির একটি সুবিখ্যাত অতি প্রাচীন মন্দির। ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটির নীলাচল পাহাড়ে এটি অবস্থিত। এখানে আদিশক্তি বা মা কামাখ্যার যোনী পূজা করা হয়। তন্ত্রশক্তির আরেক পীঠস্থান বলা যায় এটাকে। প্রতিবছর অম্বুবাচী মেলায়  প্রচুর লোক আসে দেশ বিদেশ থেকে। এবং মা কামাখ্যার অদ্ভুত শক্তির জন্য ৫১ শক্তি পীঠের মধ্যে অন্যতম শক্তিপীঠ এই কামাখ্যা মন্দির।

কালিকাপুরাণ অনুযায়ী  মাতা সতীর পিতা দক্ষরাজ একটি যজ্ঞ আয়োজন করেছিলেন, সেখানে দক্ষরাজ সতী এবং মহাদেব শিবকে আমন্ত্রণ না জানালে এবংশিবের অপমান করলে তা সহ্য করতে করতে না পেরে মাতা সতী সেই যজ্ঞে দেহত্যাগ করেন। আর মহাদেব তা সহ্য করতে না পেরে মাতা সতীকে কাঁধে নিয়ে তুমুল নৃত্য করতে থাকে। তখন পুরো বিশ্বমন্ডল কাঁপতে থাকে। সেইসময় সমস্ত দেবতাদের অনুরোধে দেবাদিদেব শিবকে থামাতে ভগবান বিষ্ণু তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে মাতা সতীর দেহকে ৫১টি খন্ডে ছেদ করেন।

৫১ খন্ডের একটি খন্ড (যোনীটা) পড়েছিলো ভারতের আসামের গুয়াহাটী পাহাড়ে। পরবর্তীতে সেখানে শক্তিপীঠ গড়ে উঠে, এবং যোনীপূজার প্রচলন হয়।

মায়ের যোনীকে এই পৃথিবীতে জন্ম নেয়া মানুষদের প্রবেশদ্বার বলে মানা হয়। তাই মন্দিরটিকে খুব জাগ্রত বা শক্তিশালী মন্দির হিসেবেই মানা হয়। মাতার গর্ভগৃহে কোন মূর্তির পূজা করা হয় না। মূল গর্ভগৃহে মাতার যোনী পূজা করা হয়। মাতার এই মন্দিরটিকে তন্ত্রশক্তির মূল স্থান হিসেবে মানা হয় এবং মাতা কামাখ্যাকে তন্ত্রশক্তির সর্বোচ্চ দেবী হিসেবে মানা হয়।

তবে মূল গর্ভগৃহের বাইরে তাঁর দশটি মহা বিদ্যারূপের পূজা করা হয়। মাতার দশটি আলাদা আলাদা মহাবিদ্যার অবতার এখানে দেখতে পাওয়া যায়। কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, ত্রিপুরা সুন্দরী, মাতঙ্গী, কমলা এ দশটি মহাবিদ্যা তন্ত্রশক্তিতে পরিপূর্ণ। এবং এখানে কালো যাদু দ্বারা বা অশুভ শক্তি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ভালো করা হয় এবং তাদের সুস্থ করার প্রথা ও এখানে চালু আছে।

সাধারণ মন্দিরের মতো এই মন্দির সকাল ৮ টা  থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খোলা থাকে। কিন্তুু এই মন্দিরটি আবার সাধারণ মন্দিরের মতোও নয়। মাতার যোনীটি একটি গর্ভগৃহে বা গুহার ভিতর অবস্থিত।  যোনীটি সবসময় ফুল দিয়ে ঢাকা থাকে, এবং মাতার যোনীটি থেকে সবসময় প্রাকৃতিক জলের প্রবাহ নির্গত হতে থাকে। কিন্তুু এই জলের প্রবাহ কোথা থেকে আসে আজ পর্যন্ত সেটা জানা যায় নি। প্রতিমাসে ৩ দিন মায়ের মন্দির বন্ধ থাকে। এবং ওই দিনগুলোতে মায়ের মাসিক হিসেবে লাল জল প্রবাহ বা রজস্ নির্গত হতে দেখা যায়। এবং লাল রজস্ নির্ঘত হয় বলেই এই মন্দিরটি ৩দিন পর্যন্ত বন্ধ থাকে। সবচেয়ে অবাক হবেন এই জেনে যে, ৩ দিন মায়ের যে লাল রজস্ বের হয় তাতে পাশে অবস্থিত ব্রহ্মপুত্র নদীর জল পর্যন্ত পুরো লাল হয়ে যায়।

মাসিক শেষ হওয়ার ৩দিন পর অর্থ্যাৎ ৪র্থ দিন যখন মায়ের মন্দির খোলা হয় তখন ভীষণ আড়ম্বরের সহিত মায়ের পূজা করা হয়। এখানে মায়ের পূজার প্রসাদ হিসেবে কিন্তুু কোন ফল মূল বা খিচুড়ি দেওয়া হয় না।  প্রসাদ হিসেবে দেয়া হয় একটি লাল কাপড়ের টুকরো। আর এই লাল কাপড়টি আনা হয় গর্ভগৃহ থেকে।মায়ের মাসিক যখন ধর্মে বিরাজমান থাকে, তখন গর্ভগৃহে যোনীর নীচে সাদা কাপড় ছড়িয়ে রেখে ৩ দিন পর ৪র্থ দিনে মন্দির খোলা হলে দেখা যায় সেই সাদা  কাপড়টি লাল হয়ে গেছে। তখন সেই কাপড়টিকেই খন্ড খন্ড করে কেটে সকল ভক্তদের মাঝে প্রসাদ হিসেবে দেয়া হয়। এই কাপড়টি পুরুষেরা ডানহাত বা গলায় ও মহিলারা বাম হাত বা গলায় পরিধান করতে পারেন। কিন্তুু রক্তবস্ত্র পরিধান করে শশ্মান বা মৃতের ঘরে যাওয়া নিষিদ্ধ। 

কামাখ্যা মন্দিরে মাকে প্রসন্ন করার উদ্দেশ্যে এবং মাতার জাগরণ করার জন্য মেষ এবং ছাগল বলি দেয় অনেকে। তবে কোন নরবলি দেয়া হয় না। যদি কেউ একদম পরিষ্কার মনে পূজো দেয় এবং মা যদি প্রসন্ন হন তাহলে ভক্তদের সকল বিপদ আপদ চলে যায়, কঠিন রোগ সেরে যায় এবং মনের সকল বাসনা পূর্ণ হয়। এখানে তন্ত্রশক্তি লাভের জন্য অনেকে সারারাত ব্যাপী মাতা কামাখ্যার সাধনা করে থাকে। এমনকি অনেকে কালো যাদু থেকে মুক্তি লাভের জন্য এই সব তান্ত্রিকদের কাছে আসে।

সর্বশেষে একটি কথা বলবো,
যোনী অর্থ ভ্যাজাইনা, যা থেকে মানুষের জন্ম হয়ে থাকে। অর্থাৎ যোনীকে এই পৃথীবিতে জন্ম নেয়া সমস্ত মানুষের জীবনের প্রবেশেদ্বার হিসেবে ভাবা হয় বলে এতো আড়ম্বরের সহিত এখানে মাতা কামাখ্যার পূজা হয়ে থাকে। মানুষের জন্মদাত্রী এই মাতৃজননীকে শ্রদ্ধার সহিত নমন করা উচিৎ।

[ বিঃদ্রঃ লেখার মধ্যে  কোন ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালো লাগলে শেয়ার করবেন। ]

Comments

Popular posts from this blog

অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী (স্যার) কথা কি ভুলে গেছেন সবাই ???

আবারো লাভ জিহাদের স্বীকার মেঘলা মহাজন