অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী (স্যার) কথা কি ভুলে গেছেন সবাই ???
আজ ১৬ই নভেম্বর। নাজিরহাট কলেজের মুক্তিযোদ্ধা ও অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী 😥। ঠিক এই দিনে ২০০১ সালে রোজ শুক্রবার প্রতিদিনের মতো চা খেতে খেতে পেপার নিয়ে বসেন হাটহাজারি নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী। কিন্তুু সেই সকালটা যে ওনার কাল হয়ে দাঁড়াবে,কে বা বলতে পারে ?
২০০১ সাল মানে বিএনপি/জামায়াত শিবিরের রাজনীতির লীলাখেলা চলছিলো। একের পর এক সকল হিন্দুুদের বাড়িঘর/মঠ-মন্দির ভাঙ্গচুর,জ্বালিয়ে দেয়া, হিন্দুু মা/বোনকে দিনের ধর্ষণ করা চলছিলো। ঠিক তখনই সনাতনীদের অহংকার প্রয়াত গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে জামায়াত শিবির ক্যাডার রা মিলে চট্টগ্রাম মহানগরীর ব্যস্ততম জামাল খান রোডের বাসায় হাটহাজারী কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে (৬০) মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করে 😥😥
এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ১৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম মহানগরীর জামাল খান, মোমিন রোড এলাকায় অঘোষিত হরতাল পালিত হয়। সারা চট্টগ্রামে হত্যার সংবাদ প্রচারিত হয়ে যায় মহূর্তের মধ্যে। একে একে ভীড় জমান জামালখান মুহুরীর নিজ বাড়ীর চত্বরে। আসেন হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃষ্টান সাংস্কৃতিক কর্মী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। কারো চোখে জল। কারো চোখে মুখে ক্ষোভের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়ে দেখতে আসেন মুহুরীকে দেখতে।
একটি চাদর দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুহুরীর রক্তাক্ত নিথর দেহ ডেকে দিতে চাইলে মুহুর্তে শ্রীমতি উমা মুহুরী চেঁচিয়ে উঠলেন। তিনি চাদরটি সরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলেন 'বীভৎস মরদেহ দুনিয়া দেখুক'। উপস্থিত ছিলেন বয়োবৃদ্ধ ৯০ বছর বয়সেও তারণ্যের প্রতীক চট্টগ্রামের গুরুজন বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দিকে আঙ্গুল উচিয়ে হুঙ্কারের স্বরে বলে উঠলেন 'এ হত্যাকেও কি আপনি মুরগী চুরির ঘটনা বলে চালিয়ে দিবেন'? শুরু হয়ে যায় বিক্ষুব্ধ জনতার স্বরাষ্টমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ। সেদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দ্রুত ঘটনাস্থলত্যাগ করে বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে প্রানে রক্ষা পায়।
গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর মতো একজন সজ্জন, নিখাদ ভালো মানুষকে এভাবে মেরে ফেলা হবে, এমনটা কি কেউ কখনো ভেবেছিলেন!😔😔
জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত নাজিরহাট ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর নৃশংস হত্যাকান্ডে তাঁর স্ত্রী রেলওয়ে অডিট কর্মকর্তা উমা মুহুরী বাদী হয়ে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কোতোয়ালি থানার মামলা নং-৪২ তাং ১৬-১২-২০০১ ধারা ৩০২/১২০(খ)। মোট ১১ আসামির বিরম্নদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। বিচার শেষে গিট্টু নাসির, তসলিম উদ্দীন ওরফে মন্টু, আজম ও আলমগীর কবির ওরফে বাইজা আলমগীরের ফাঁসির আদেশ হয়। পরবর্তীতে গিট্টু নাসির ক্রসফায়ারে মারা যায়। আসামি মহিউদ্দিন ওরফে মাইন উদ্দীন, হাবিব খান, শাজাহান এবং সাইফুল ওরফে ছোট সাইফুলসহ ৪ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত। উচ্চ আদালতে শাজাহান খালাস পেলেও বাকিদের সাজা বহাল থাকে। বর্তমানে মামলাটি আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
দিন যায়, মাস যায়, এমনকি বছরের পর বছর চলে যাই। কিন্তুু এমন কিছু মানুষ আছে, যারা যুগ যুগ বছর গেলে ও মানুষের হৃদয়ে থেকে যায় আমরণ পর্যন্ত ❤️❤️
শ্রদ্ধা করছি, প্রয়াত গোপাল কৃষ্ণ মহুরী (স্যার).
ঈশ্বর ওনার আত্মা শান্তি করুক।।
Comments
Post a Comment